গুরু মহাশয়
.jpg)
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর 'সোনার তরী' কবিতা নিয়ে আলোচনা
মোঃ আরিফ হোসেন
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সোনার তরী কবিতাটি নিম্নরূপ:
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান-কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা-
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।।
একখানি ছোট খেত, আমি একেলা-
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা-
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোন দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দুধারে-
দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে।।
ওগো তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেও যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও-
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে-
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।।
যত চাও তত লও তরনী পরে-
আর আছে? -আর নাই, দিয়েছি ভরে।।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লহে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে-
এখন আমারে লহ করুনা ক'রে।।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ছোট সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবনগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি-
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।।
সোনার তরী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর একটি বিখ্যাত কবিতা। এ কবিতায় কবি মানুষের জীবনের কর্ম ও তার নিজের পরিনতি সম্পর্কে বলতে চেয়েছেন।কবি বলতে চেয়েছেন মানুষ একটা সময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় কিন্তু তার কর্ম পৃথিবীর বুকে ঠাঁই নেয়।অর্থাৎ মানুষের কর্মের স্থান এ পৃথিবীতে হয় কিন্তু তার নিজের স্থান হয়না।অর্থাৎ মানুষের কর্ম বেঁচে থাকে কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকেননা।কবি এ কবিতায় মানুষের জীবন নিয়ে এক ধরনের দুঃখবোধের চিত্র আঁকতে চেয়েছেন। এখানে কবি বলতে চেয়েছেন এই যে মানুষের কর্মের স্থান এ পৃথিবীতে হয় কিন্তু তার নিজের স্থান হয়না এটা এক ধরনের মানুষের জন্য দুঃখজনক ঘটনা। কবির পুরো কবিতাতেই এ নিয়ে হাহাকার বিরাজ করতেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু কবি ছিলেননা ছিলেন একজন প্রণিধানযোগ্য দার্শনিক। তাঁর এ কবিতায় মানুষের কর্ম ও জীবন নিয়ে গভীর দর্শন ফুটে উঠেছে যা আমাদের এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।আসলেই তো এ পৃথিবীতে মানুষ কত কিনা করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব ফেলে চলে যেতে হয়। মানুষের জীবনের দুঃখবোধ এ দিকটা কবি খুব গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতাটি একটি রূপক কবিতা ও উচ্চ মানুষের নান্দনিকতা সম্পন্ন কবিতা। এ কবিতা' খুব সহজেই বাংলা ভাষার সবচেয়ে প্রশংসনীয় কবিতাগুলোর মধ্যে স্থান পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।কবিতাটি আমাদের এক ভিন্ন ভাবের জগতে নিয়ে যায় যা আমাদের মনে এক ভিন্ন রেখাপাতের সূচনা করে।
আপনার মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা
ReplyDelete